যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে শুরু হয়েছে বাঙালির প্রাণের উৎসব ৩২তম বাংলা বইমেলা। এবারের বইমেলার স্লোগান হচ্ছে- ‘যত বই তত প্রাণ।’ স্থানীয় সময় শুক্রবার (১৪ জুলাই) নিউইয়র্কের বাংলাদেশি অধ্যুষিত কুইন্সের জ্যামাইকা পারফরমিং আর্টস সেন্টারে ফিতা কেটে চারদিনের এই বইমেলার উদ্বোধন করেন কথাসাহিত্যিক ও গবেষক শাহাদুজ্জামান।
আগামী ১৭ জুলাই পর্যন্ত চলবে বইমেলা। ৩২তম বইমেলায় ভারতের কোলকাতা ও বাংলাদেশের প্রথম সারির ২৫টি প্রকাশনী সংস্থা অংশ নিয়েছে। থাকছে বাংলাদেশ, ভারত ও প্রবাসের ৩০টিরও বেশি বইয়ের স্টল।
এবারের বইমেলার প্রধান অতিথি ছিলেন ক্যাপ্টেন ডা. সিতারা বেগম, বীর প্রতীক। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন বইমেলার আহবায়ক ও লেখক ড. আবদূন নূর।
মেলা উপলক্ষে আদনান সৈয়দের সম্পাদনায় প্রকাশিত হয়েছে একটি বিশেষ সংকলন। মেলা প্রাঙ্গণের সমরেশ মজুমদার মঞ্চে প্রদান করা হয় আজীবন সম্মাননা। এবার সন্মাননা পেয়েছেন সুবীর চৌধুরী ও নূরজাহান বোস। বাণিজ্যিক ব্যবস্থাপনায় বিশ্বের সেরা ৫০ জন থট লিডারের একজন সুবীর চৌধুরী। স্মারক সম্মাননা দেওয়া হয়েছে কথাসাহিত্যিক শাহাদুজ্জামান ও বীর প্রতীক ক্যাপ্টেন ডা. সিতারা বেগমকে।
কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, ইউরোপের বিভিন্ন দেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্য থেকে বাঙ্গালি সাহিত্য সংস্কৃতিপ্রেমীরা জড়ো হয়েছেন এই মেলায়। ঘুরে ঘুরে দেখছেন এবং কিনছেন প্রিয় লেখকের বই।
বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও কৃষ্টিকে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দিতে যুক্তরাষ্ট্রে ধারাবাহিকভাবে বাংলা বইমেলার আয়োজন করে আসছে মুক্তধারা ফাউন্ডেশন। মুক্তধারা ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী বিশ্বজিত সাহা জানান, বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে সাহিত্যিকেরা নিউইয়র্কের বইমেলায় এসেছেন। এটি সারা বিশ্বের সাহিত্যপ্রেমী সব বাঙালির মেলায় পরিণত হয়। অনেক বই প্রকাশিত হয় নিউইয়র্ক বইমেলা সামনে রেখে। তাই স্টলের সংখ্যাও বাড়ছে, থাকছে শিশু চত্ত্বর। প্রতি বছরের মতো এবারও বই মেলাজুড়ে থাকছে লেখক, পাঠক, প্রকাশক ও নতুন বই নিয়ে আলোচনা, সেমিনার সংস্কৃতিক পরিবেশনাসহ নানা আয়োজন। আমন্ত্রিত অতিথিরা বাংলা ভাষা, শিল্প, সাহিত্য ও কৃষ্টির আধুনিক চর্চা নিয়ে বিভিন্ন পর্বে ভাগ হয়ে আলোচনায় অংশ নেবেন।
দর্শনার্থীরা বলছেন, এটি শুধু বইমেলা না, সংস্কৃতি মেলা, আনন্দ উৎসব। তরুণদের যুক্ত করার মিলনমেলা। সংস্কৃতিঘনিষ্ঠ বাঙালিদের এক আবেদনময় উৎসবের নাম ‘নিউইয়র্ক বইমেলা’। প্রবাসী বাঙালিদের যুক্ত করাই বইমেলার সার্থকতা।
এবারও বইমেলায় মুক্তধারা-জিএফবি সাহিত্য পুরস্কার দেওয়া হবে। পুরস্কারের অর্থমূল্য তিন হাজার মার্কিন ডলার। গত বছর এ পুরস্কার পেয়েছিলেন গবেষক ও লেখক অধ্যাপক গোলাম মুরশীদ। মেলায় অভিবাসী নতুন লেখকদের প্রকাশিত গ্রন্থের জন্য ‘শহীদ কাদরী গ্রন্থ পুরস্কার ২০২৩’ এবং মেলায় অংশগ্রহণকারী শ্রেষ্ঠ প্রকাশনা সংস্থাকে চিত্তরঞ্জন সাহা সেরা প্রকাশনা সংস্থা পুরস্কার দেওয়া হবে।
বইমেলার মঞ্চে প্রতিদিনই রয়েছে নানান সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। সব বয়সী মানুষের উপস্থিতিতে মেলা প্রাঙ্গল পরিণত হয়েছে বাঙালির মিলনমেলায়।